সংঘবদ্ধ লেখকশক্তি ও সমসাময়িকতা
সমসাময়িকতা থেকে একটু পিছিয়ে থাকলে খুব একটা ক্ষতি নেই। বরং পিছিয়ে পড়া মানুষরা অবক্ষয়টা টের পায় আগে ভাগে। প্রতিটি পরিবর্তন কিংবা এগিয়ে যাওয়ার ধাপগুলো তারা তৃতীয় কোণ থেকে দেখতে পায়। এক দৃষ্টিতে তাদেরকে সমাজ পরিবর্তনের ‘ওয়াচ ডগ’ বলা যায়।
সমসাময়িক (contemporary) মানুষরা সময়ের স্রোতে ভেসে চলেন। তারা হাওয়ার পক্ষে পাল তোলেন। পাল তোলার অবশ্য এটাই নিয়ম। হাওযার বিপক্ষে পাল তুললে হয় পাল ছিড়বে, নতুবা ইচ্ছার বিপরীত পথে যাত্রা হবে। যাই হোক, সমসাময়িক আধুনিক মানুষরা খুব একটা সৃস্টিশীল হন না, কারণ তারা নবসৃষ্টির ভোক্তামাত্র, কিংবা অনেক ক্ষেত্রে প্রণোদনা।……
অনেক দিন পর প্রিয় শিক্ষকের নাতিদীর্ঘ বক্তব্য শুনলাম। আজকাল যা শোনার, তা গিলতে হয়, মধ্যরাতের টক-শোতে। কারো ঘুম নষ্ট হয় তিক্ততা অবলোকনে, কারো নিদ্রার সূত্রপাত হয় একঘেয়ে বচনের সূরলহরীতে। সভা সমিতিতে মানুষ বক্তব্যকে ভয় পায়। অনেকেই চশমার আড়ালে প্রয়োজনীয় নিদ্রাটি সেরে অবসন্নতা কাটিয়ে নেন।
সেদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্তাব্যাক্তি বলে রেখেছিলেন, “স্যার অসুস্থ, কিছু বলবেন না। শুধু মোড়ক উন্মোচন করেই হয়তো চলে যাবেন।”
টুকটাক কথাবার্তা হল। কাজের কাজটি শেষ হল। স্যার ফটোসেশনে সাগ্রহে অংশ নিলেন। মুখে খোলামেলা হাসি। তরল মনের সুযোগে, কানে কানে বললাম, ‘‘স্যার, আমাদের একটু আশির্বাদ দেবেন না?” সেকেন্ডের ভগ্নাংশের দৃষ্টি বিনিময়ে স্যারের মনকে পড়ে ফেললাম। হোক শত সহস্র স্রোতা নেই, তবে সামনে যারা আছে তারা শুনতে চায়! তারাও হৃদ্ধ মানুষ।
প্রথম দুটি প্যারা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ-এর বিশ মিনিটের বক্তব্যের একটি সূর। তিনি বলেলেন সাধনা ও বিকাশের কথা, ভার্চুয়াল জগতের কথা। ….সাধনা করতে হবে একা। জীবনে একাকিত্ব খুব প্রয়োজন। নিজের আত্মিক উন্নতির জন্য নিভৃতচারণ প্রয়োজন। কিন্তু বিকাশের জন্য দল প্রয়োজন। সামষ্টিক শক্তি প্রয়োজন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) নির্জন হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন। তারপর আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান-উপলব্ধি মানুষের কাছে নিয়ে এসেছেন। গৌতম বুদ্ধ ধ্যান করেছেন। কিন্তু ঠিকই তার বাণী সাধারণ মানুষকে বিলিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মের জন্য সমষ্টি প্রয়োজন।
প্রত্যককে আত্মিক বিকাশ ঘটাতে হবে, নিভৃতে। কিন্তু সেটা হবে সামগ্রিক বিকাশ, উচ্চ স্বরে প্রয়োগ করতে হবে দলে, গোষ্টিতে, সংঘে।….গৌতম বুদ্ধ চিরদিনই বোধিদ্রুমের নিচে বসে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সাধারণের কাছে এসেছিলেন। তাঁর উপলব্ধি সমাপ্ত হলে কর্মযজ্ঞের প্রয়োজনেই তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন।…‘‘বুদ্ধং স্মরণং গচ্ছামি’’, ‘‘ধর্মং স্মরনং গচ্ছামি’’ এই দুইয়ের পরই আসছে ‘‘সংঘম স্মরণং গচ্ছামি’’। সব মিথ্যা হয়ে যায় যদি সংঘবদ্ধ শক্তি সৃষ্টি না হয়। অর্থাৎ কর্ম কিংবা সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো ‘সংঘ’। অনেকগুলো ‘একা’র শক্তি যখন সংঘে বা দলে গতিময়তা আনবে তখনই বিপ্লব আসবে।
কয়েকজন লেখক একাকী লিখতে লিখতে একটি লেখক সংগঠণে চলে এলো। গোপনে গোপনে লিখতে লিখতে পারস্পরিক একটি নিরব প্রতিযোগিতাবোধ সৃষ্টি করতে হবে, যার নাম ‘প্রফেশনাল জেলাসি’। তাহলেই দলের মধ্যে গতি আসবে।….‘‘ওপাড়েতে পাটা নাই পুতা নাই, মরিচ বাটে কালে, ওরা খেলো তাড়াতাড়ি আমরা মরি ঝালে’’ অর্থাৎ আরেকজন আমাকে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে এই বোধটা প্রয়োজন!
‘পেশাদার ঈর্শা’ মানে কাদা ছোড়াছুড়ি নয়। এটা হতে হবে নিজের ভেতরের চালিকাশক্তি।
ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু হওয়া সম্ভব। কিন্তু স্পর্শ উষ্ণতা ছাড়া ওটা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ভার্চুয়াল জগতের লেখকরা এক হয়ে স্পর্শের শক্তিতে স্থির বায়ুতে টর্নেডো সৃষ্টি করবে।
সুস্থ্য প্রতিযোগিতা অনেকটা এরকম- একটি ভ্রমণ কাহিনী পড়ে মুগ্ধ হয়ে আরেক লেখক একটি ভ্রমণকাহিনী লিখলেন। তার মুখবন্ধে লিখলেন-‘‘ওমুক লেখকের তমুক বইটি পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই লেখা….।’’ এই ‘উদ্বুদ্ধ’ শব্দটি মেকি। আসলে এটার আড়ালে রয়েছে, আগের লেখকের প্রতি ঈর্ষা, অতিক্রম করে যাবার আকাংখা। এ ধরণের প্রতিযোগিতা মহৎ বিষয়। এটা নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগরিত করে।
সংঘবদ্ধ লেখায় এই প্রতিযোগিতাবোধ লেখায় গতিময়তা আনবে। তবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে এই সংঘবদ্ধতা সম্ভব কিনা প্রশ্নসাপেক্ষ। সংঘবদ্ধতা আসে প্রাণে প্রাণে, জীবনে জীবনে, মানুষে মানুষে, উত্তাপে উত্তাপে। যন্ত্রের বিকাশে পৃথিবী ভার্চুয়াল হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্র মানুষের কাজ করছে, আমরা তাই আজকাল প্রায়শঃই বাস্তব মানুষ নই, ভার্চুয়াল কিংবা অ্যাবস্ট্রাক্ট।
….এখন টাকা দিয়ে টাকা বানানো যায়। যেমন আমেরিকার বাজারে যা বিক্রি হয়, তার কোনটাই আমেরিকায় উৎপাদিত নয়। তাদের টাকায় বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত জিনিস তাদের বাজারে চলে। এই ব্যবস্থা টিকতে পারে না। কারণ যেখানে মানুষের শ্রম, রক্ত, ঘাম, আত্মোৎসর্গ নেই, সেখানে গুণগত আয়ু বাড়তে পারে না।
ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু হওয়া সম্ভব। কিন্তু স্পর্শ, উষ্ণতা ছাড়া ওটা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। আনন্দ, স্বপ্ন বিনিময়, পাগলামী, উন্মত্ততা-এগুলো পাশাপাশি সশরীরে উপস্থিতি ব্যতিত সম্ভব নয়। পাশাপাশি বসে অকারণে আড্ডা দেয়ারও একটা শক্তি আছে। হৃদয়ে হৃদয়ে অনুভুতির বিনিময়, কম্পিউটারে বসে প্রযুক্তির সুযোগে যতই কাছে আসা যাক, এই কৃত্রিম জগতে তা সম্ভব নয়।
বইও একটি ভার্চুয়াল বিষয়। পুরণো যুগের ভার্চুয়াল। জীবন, জ্ঞান, বোধ, চিন্তাকে জীবন্ত করার চেষ্টা করা হয় এই বইয়ের মাধ্যমে। প্রত্যেক যুগেরই একটি সায়েন্স আছে। একটা যুগে যেটা বিশ্বাস ছিল, এখন সেটা সায়েন্স, ব্যাখ্যাটা হয়তো ভিন্ন। এক সময়ে যেটা ছিল মানুষের বিজ্ঞান, পরবর্তী সময়ে হয়তো সেটা হয়ে গেছে ধর্মবিশ্বাস। তাই অনেকে বলে থাকেন, ‘‘রিলিজিয়ন ইজ ডেড সায়েন্স”। বিজ্ঞান যখন মরে যায়, কিংবা ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন তা ধর্মের আড়ালে চলে আসে।
যুদ্ধে যেমন দামামা লাগে, লাগে রণনিনাদ, সংঘেও তেমন জোশ উদ্দীপক কিছু উপাদান প্রয়োজন। আন্দোলন প্রয়োজন। প্রাণের জাগরণ দরকার। তাই এখানে এমন কিছু মাঝে মাঝে করে ফেলতে হয়, যাতে জাগরণ আসে সমষ্টির শক্তিতে।
সমসাময়িকতা থেকে একটু পিছিয়ে থাকলে খুব একটা ক্ষতি নেই। বরং পিছিয়ে পড়া মানুষরা অবক্ষয়টা টের পায় আগে ভাগে। প্রতিটি পরিবর্তন কিংবা এগিয়ে যাওয়ার ধাপগুলো তারা তৃতীয় কোণ থেকে দেখতে পায়। এক দৃষ্টিতে তাদেরকে সমাজ পরিবর্তনের ‘ওয়াচ ডগ’ বলা যায়।
সমসাময়িক (contemporary) মানুষরা সময়ের স্রোতে ভেসে চলেন। তারা হাওয়ার পক্ষে পাল তোলেন। পাল তোলার অবশ্য এটাই নিয়ম। হাওযার বিপক্ষে পাল তুললে হয় পাল ছিড়বে, নতুবা ইচ্ছার বিপরীত পথে যাত্রা হবে। যাই হোক, সমসাময়িক আধুনিক মানুষরা খুব একটা সৃস্টিশীল হন না, কারণ তারা নবসৃষ্টির ভোক্তামাত্র, কিংবা অনেক ক্ষেত্রে প্রণোদনা।……
অনেক দিন পর প্রিয় শিক্ষকের নাতিদীর্ঘ বক্তব্য শুনলাম। আজকাল যা শোনার, তা গিলতে হয়, মধ্যরাতের টক-শোতে। কারো ঘুম নষ্ট হয় তিক্ততা অবলোকনে, কারো নিদ্রার সূত্রপাত হয় একঘেয়ে বচনের সূরলহরীতে। সভা সমিতিতে মানুষ বক্তব্যকে ভয় পায়। অনেকেই চশমার আড়ালে প্রয়োজনীয় নিদ্রাটি সেরে অবসন্নতা কাটিয়ে নেন।
সেদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্তাব্যাক্তি বলে রেখেছিলেন, “স্যার অসুস্থ, কিছু বলবেন না। শুধু মোড়ক উন্মোচন করেই হয়তো চলে যাবেন।”
টুকটাক কথাবার্তা হল। কাজের কাজটি শেষ হল। স্যার ফটোসেশনে সাগ্রহে অংশ নিলেন। মুখে খোলামেলা হাসি। তরল মনের সুযোগে, কানে কানে বললাম, ‘‘স্যার, আমাদের একটু আশির্বাদ দেবেন না?” সেকেন্ডের ভগ্নাংশের দৃষ্টি বিনিময়ে স্যারের মনকে পড়ে ফেললাম। হোক শত সহস্র স্রোতা নেই, তবে সামনে যারা আছে তারা শুনতে চায়! তারাও হৃদ্ধ মানুষ।
প্রথম দুটি প্যারা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ-এর বিশ মিনিটের বক্তব্যের একটি সূর। তিনি বলেলেন সাধনা ও বিকাশের কথা, ভার্চুয়াল জগতের কথা। ….সাধনা করতে হবে একা। জীবনে একাকিত্ব খুব প্রয়োজন। নিজের আত্মিক উন্নতির জন্য নিভৃতচারণ প্রয়োজন। কিন্তু বিকাশের জন্য দল প্রয়োজন। সামষ্টিক শক্তি প্রয়োজন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) নির্জন হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন। তারপর আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান-উপলব্ধি মানুষের কাছে নিয়ে এসেছেন। গৌতম বুদ্ধ ধ্যান করেছেন। কিন্তু ঠিকই তার বাণী সাধারণ মানুষকে বিলিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মের জন্য সমষ্টি প্রয়োজন।
প্রত্যককে আত্মিক বিকাশ ঘটাতে হবে, নিভৃতে। কিন্তু সেটা হবে সামগ্রিক বিকাশ, উচ্চ স্বরে প্রয়োগ করতে হবে দলে, গোষ্টিতে, সংঘে।….গৌতম বুদ্ধ চিরদিনই বোধিদ্রুমের নিচে বসে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সাধারণের কাছে এসেছিলেন। তাঁর উপলব্ধি সমাপ্ত হলে কর্মযজ্ঞের প্রয়োজনেই তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন।…‘‘বুদ্ধং স্মরণং গচ্ছামি’’, ‘‘ধর্মং স্মরনং গচ্ছামি’’ এই দুইয়ের পরই আসছে ‘‘সংঘম স্মরণং গচ্ছামি’’। সব মিথ্যা হয়ে যায় যদি সংঘবদ্ধ শক্তি সৃষ্টি না হয়। অর্থাৎ কর্ম কিংবা সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো ‘সংঘ’। অনেকগুলো ‘একা’র শক্তি যখন সংঘে বা দলে গতিময়তা আনবে তখনই বিপ্লব আসবে।
কয়েকজন লেখক একাকী লিখতে লিখতে একটি লেখক সংগঠণে চলে এলো। গোপনে গোপনে লিখতে লিখতে পারস্পরিক একটি নিরব প্রতিযোগিতাবোধ সৃষ্টি করতে হবে, যার নাম ‘প্রফেশনাল জেলাসি’। তাহলেই দলের মধ্যে গতি আসবে।….‘‘ওপাড়েতে পাটা নাই পুতা নাই, মরিচ বাটে কালে, ওরা খেলো তাড়াতাড়ি আমরা মরি ঝালে’’ অর্থাৎ আরেকজন আমাকে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে এই বোধটা প্রয়োজন!
‘পেশাদার ঈর্শা’ মানে কাদা ছোড়াছুড়ি নয়। এটা হতে হবে নিজের ভেতরের চালিকাশক্তি।
ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু হওয়া সম্ভব। কিন্তু স্পর্শ উষ্ণতা ছাড়া ওটা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ভার্চুয়াল জগতের লেখকরা এক হয়ে স্পর্শের শক্তিতে স্থির বায়ুতে টর্নেডো সৃষ্টি করবে।
সুস্থ্য প্রতিযোগিতা অনেকটা এরকম- একটি ভ্রমণ কাহিনী পড়ে মুগ্ধ হয়ে আরেক লেখক একটি ভ্রমণকাহিনী লিখলেন। তার মুখবন্ধে লিখলেন-‘‘ওমুক লেখকের তমুক বইটি পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই লেখা….।’’ এই ‘উদ্বুদ্ধ’ শব্দটি মেকি। আসলে এটার আড়ালে রয়েছে, আগের লেখকের প্রতি ঈর্ষা, অতিক্রম করে যাবার আকাংখা। এ ধরণের প্রতিযোগিতা মহৎ বিষয়। এটা নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগরিত করে।
সংঘবদ্ধ লেখায় এই প্রতিযোগিতাবোধ লেখায় গতিময়তা আনবে। তবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে এই সংঘবদ্ধতা সম্ভব কিনা প্রশ্নসাপেক্ষ। সংঘবদ্ধতা আসে প্রাণে প্রাণে, জীবনে জীবনে, মানুষে মানুষে, উত্তাপে উত্তাপে। যন্ত্রের বিকাশে পৃথিবী ভার্চুয়াল হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্র মানুষের কাজ করছে, আমরা তাই আজকাল প্রায়শঃই বাস্তব মানুষ নই, ভার্চুয়াল কিংবা অ্যাবস্ট্রাক্ট।
….এখন টাকা দিয়ে টাকা বানানো যায়। যেমন আমেরিকার বাজারে যা বিক্রি হয়, তার কোনটাই আমেরিকায় উৎপাদিত নয়। তাদের টাকায় বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত জিনিস তাদের বাজারে চলে। এই ব্যবস্থা টিকতে পারে না। কারণ যেখানে মানুষের শ্রম, রক্ত, ঘাম, আত্মোৎসর্গ নেই, সেখানে গুণগত আয়ু বাড়তে পারে না।
ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু হওয়া সম্ভব। কিন্তু স্পর্শ, উষ্ণতা ছাড়া ওটা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। আনন্দ, স্বপ্ন বিনিময়, পাগলামী, উন্মত্ততা-এগুলো পাশাপাশি সশরীরে উপস্থিতি ব্যতিত সম্ভব নয়। পাশাপাশি বসে অকারণে আড্ডা দেয়ারও একটা শক্তি আছে। হৃদয়ে হৃদয়ে অনুভুতির বিনিময়, কম্পিউটারে বসে প্রযুক্তির সুযোগে যতই কাছে আসা যাক, এই কৃত্রিম জগতে তা সম্ভব নয়।
বইও একটি ভার্চুয়াল বিষয়। পুরণো যুগের ভার্চুয়াল। জীবন, জ্ঞান, বোধ, চিন্তাকে জীবন্ত করার চেষ্টা করা হয় এই বইয়ের মাধ্যমে। প্রত্যেক যুগেরই একটি সায়েন্স আছে। একটা যুগে যেটা বিশ্বাস ছিল, এখন সেটা সায়েন্স, ব্যাখ্যাটা হয়তো ভিন্ন। এক সময়ে যেটা ছিল মানুষের বিজ্ঞান, পরবর্তী সময়ে হয়তো সেটা হয়ে গেছে ধর্মবিশ্বাস। তাই অনেকে বলে থাকেন, ‘‘রিলিজিয়ন ইজ ডেড সায়েন্স”। বিজ্ঞান যখন মরে যায়, কিংবা ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন তা ধর্মের আড়ালে চলে আসে।
যুদ্ধে যেমন দামামা লাগে, লাগে রণনিনাদ, সংঘেও তেমন জোশ উদ্দীপক কিছু উপাদান প্রয়োজন। আন্দোলন প্রয়োজন। প্রাণের জাগরণ দরকার। তাই এখানে এমন কিছু মাঝে মাঝে করে ফেলতে হয়, যাতে জাগরণ আসে সমষ্টির শক্তিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন