বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১২

সাধ একটি পারলৌকিক ডিম

দুপুরটা রঙচটা। বিবর্ণ। পাশের বাড়ির জানালায় ফটোকপি হয়ে ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে ফ্যাকাসে রোদ। তাতে মিশেছে এক চিলতে সোঁদাগন্ধ। উৎস জানা নেই। বারান্দার টবে পাতাবাহারের গাছ ঘুমে ক্লান্ত। ধোঁয়া উঠছে সাফিদের টিনের চূড়া ভেদ করে। নাকে ঢুকছে মুগ ডালের গন্ধ। আহ্! সাথে একটু বোম্বে মরিচ হলে মন্দ হতোনা।



রসনায় আগের সেই আহ্লাদ নেই। সবকিছুতেই বোঁটকা গন্ধ। বৈরুত বিকেলের মত সতেজ নেই প্রাণ। পশম ক্ষয়ে যাওয়া মাদী কুকুরের মতই সবকিছু বিস্বাদ। জবার মাকে বলেছিলাম একটু সরষের তেল যেন দেয়। রোদে পুড়িয়ে গতরে মাখব।

মহল্লার পোলাপাইন নীলছবির আসর বসায়না। দেখার বড় সাধ জাগে। ঘরে ঘরে নীলের মক্তব বসে গেলে মজমায় কজন জমে বলুন! ভিসিআরের যুগটাই ছিল আলাদা। নামাজের মত করেই বা’জামাত নীল উৎসব।

কক কক কককরৎ। মুরগাটা গলা ছিলা। ডাকে কিন্তু ভারী। ডিম পেরেছে। আমাকে দিবেনা জানি। সুযোগ পেলে কাঁচাই সাবড়ে দিতাম। ছোটবেলায় কত খেয়েছি! আচ্ছা ওদের কি একটুও সাধ হয়না এই বুড়োটাকে মনের মাধুরী মিশিয়ে একটু খেতে দিতে। বেচারীদের জীবন থেকে সাধ আহ্লাদও চলে গেল!

রোদ তুই আমার বাপ লাগস। আরেকটু থাক। ঠান্ডায় চিনচিনে ব্যাথাটা বেড়ে যায়। গলায় নামে কাশের মেশিন। আহা! সারাটা জীবন এই রোদ থাকেনা ক্যান ?

মিতুরা স্কুল থেকে ফিরেছে। আমাকে দেখে একটু হাসে। চোখ টিপি দেয়। ভাবে বুড়া মাইনষের সাথে এইসব করলে কী এমন হয়। আমিও বজ্জাত ছিলাম। তোমাগো বয়সে কত্তজনরে টিজ করছি হিসাব রাখিনাই। সখিনায় তো গলায় ফাঁস দিছে আমার লাইগাই। আহারে অবুঝ পোলাপাইন! যদি বুঝতা কত খতরনাক এই বুইড়া তাইলে কি আর ঢলাঢলি করতা এত আয়েসে!

এই সব কচিকাচার আসর এখন থাক। তারচে’ কবিতা লিখি একখান। হে মোর প্রিয়ে! তুমি কোন বিজন তপ্ত বনে বসে আছ মোর পথ চাহি....ধুর এই মেজাজে কবিতা হয় ? বরং খিস্তি চলুক কিছুক্ষণ...ওহে ধুমসী ললনা! কেন তুমি দুলিয়ে কোমড় হেঁটে যাও সামনে দিয়া। শরীরে বয়স আঁচড় দিলেও মনে তো লাগেনা বিকেলের গন্ধ। নাহ কাব্য চলে আসছে বার বার।

এরচে’ সেইদিনটির কথা বলি। বৈরুতের গেরিলা ছিলাম। কয়েকদিন দানাপানি পড়েনাই পেটে। আকাশে সূর্য দেখা যায়না। ভারী ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে সামিয়ানা। হঠাৎ কাশেমের বুকে গুলি লাগল। আমার হাতের উপর ঢইলা পড়ল তাজা মর্দে মোমিন। আমার ঈমান পিছনের দরজা দিয়া পলাইলো। বাড়িতে মায় কানতাছে। ওগোরে কইলাম ঘুমাইলে খালি দেহি মায়ের মুখ। আমারে বাড়িত যাইতে দাও। সপ্তাহের মইদ্যেই ফির‌্যা আমু কসম খোদার।

হেরপর জেহাদের জজবায় পানি ঢাইল্যা সোজা বাড়ি। আমার টিজিং দিনগুলা শেষ হই গেলরে কাশেইম্যা! আরব কান্ট্রি ঘুইরা আইয়া আর মাইয়াগোরে উল্টা সিধা কতা কইতে পারিনা। রাইতের ভিসিআরেও আমারে ডাকেনা কেউ। আমি বুঝি খাসি হইয়া গেলামরে! এহন মাইয়ারাও আমারে টিজ করে। আমি নাদান কিছু কইতে পারিনা।

ধুর এই বয়সে এইসব কি কইতাছি। তারচেয়ে বেহেস্তের কথা ভাবি কিছুক্ষণ। দোজখের শাস্তির নিষ্ঠুরতা মাপি একটু। আর মনে মনে আল্লার কাছে পানাহ্ চাই। খোদা গো! তুমি আমার জীন্দেগীর সকল গুনাহ মাফ কইরা দাও। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছগিরা। হে আল্লাহ! তুমি আমারে বেহেস্ত নসীব কর।

1 টি মন্তব্য:

  1. কি গল্প হলো এটা? মনে হলো যেন শেষ হয়েও শেষ হলোনা। আরো কিছুটা দরকার ছিলো!

    উত্তরমুছুন

বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১২

সাধ একটি পারলৌকিক ডিম

দুপুরটা রঙচটা। বিবর্ণ। পাশের বাড়ির জানালায় ফটোকপি হয়ে ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে ফ্যাকাসে রোদ। তাতে মিশেছে এক চিলতে সোঁদাগন্ধ। উৎস জানা নেই। বারান্দার টবে পাতাবাহারের গাছ ঘুমে ক্লান্ত। ধোঁয়া উঠছে সাফিদের টিনের চূড়া ভেদ করে। নাকে ঢুকছে মুগ ডালের গন্ধ। আহ্! সাথে একটু বোম্বে মরিচ হলে মন্দ হতোনা।



রসনায় আগের সেই আহ্লাদ নেই। সবকিছুতেই বোঁটকা গন্ধ। বৈরুত বিকেলের মত সতেজ নেই প্রাণ। পশম ক্ষয়ে যাওয়া মাদী কুকুরের মতই সবকিছু বিস্বাদ। জবার মাকে বলেছিলাম একটু সরষের তেল যেন দেয়। রোদে পুড়িয়ে গতরে মাখব।

মহল্লার পোলাপাইন নীলছবির আসর বসায়না। দেখার বড় সাধ জাগে। ঘরে ঘরে নীলের মক্তব বসে গেলে মজমায় কজন জমে বলুন! ভিসিআরের যুগটাই ছিল আলাদা। নামাজের মত করেই বা’জামাত নীল উৎসব।

কক কক কককরৎ। মুরগাটা গলা ছিলা। ডাকে কিন্তু ভারী। ডিম পেরেছে। আমাকে দিবেনা জানি। সুযোগ পেলে কাঁচাই সাবড়ে দিতাম। ছোটবেলায় কত খেয়েছি! আচ্ছা ওদের কি একটুও সাধ হয়না এই বুড়োটাকে মনের মাধুরী মিশিয়ে একটু খেতে দিতে। বেচারীদের জীবন থেকে সাধ আহ্লাদও চলে গেল!

রোদ তুই আমার বাপ লাগস। আরেকটু থাক। ঠান্ডায় চিনচিনে ব্যাথাটা বেড়ে যায়। গলায় নামে কাশের মেশিন। আহা! সারাটা জীবন এই রোদ থাকেনা ক্যান ?

মিতুরা স্কুল থেকে ফিরেছে। আমাকে দেখে একটু হাসে। চোখ টিপি দেয়। ভাবে বুড়া মাইনষের সাথে এইসব করলে কী এমন হয়। আমিও বজ্জাত ছিলাম। তোমাগো বয়সে কত্তজনরে টিজ করছি হিসাব রাখিনাই। সখিনায় তো গলায় ফাঁস দিছে আমার লাইগাই। আহারে অবুঝ পোলাপাইন! যদি বুঝতা কত খতরনাক এই বুইড়া তাইলে কি আর ঢলাঢলি করতা এত আয়েসে!

এই সব কচিকাচার আসর এখন থাক। তারচে’ কবিতা লিখি একখান। হে মোর প্রিয়ে! তুমি কোন বিজন তপ্ত বনে বসে আছ মোর পথ চাহি....ধুর এই মেজাজে কবিতা হয় ? বরং খিস্তি চলুক কিছুক্ষণ...ওহে ধুমসী ললনা! কেন তুমি দুলিয়ে কোমড় হেঁটে যাও সামনে দিয়া। শরীরে বয়স আঁচড় দিলেও মনে তো লাগেনা বিকেলের গন্ধ। নাহ কাব্য চলে আসছে বার বার।

এরচে’ সেইদিনটির কথা বলি। বৈরুতের গেরিলা ছিলাম। কয়েকদিন দানাপানি পড়েনাই পেটে। আকাশে সূর্য দেখা যায়না। ভারী ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে সামিয়ানা। হঠাৎ কাশেমের বুকে গুলি লাগল। আমার হাতের উপর ঢইলা পড়ল তাজা মর্দে মোমিন। আমার ঈমান পিছনের দরজা দিয়া পলাইলো। বাড়িতে মায় কানতাছে। ওগোরে কইলাম ঘুমাইলে খালি দেহি মায়ের মুখ। আমারে বাড়িত যাইতে দাও। সপ্তাহের মইদ্যেই ফির‌্যা আমু কসম খোদার।

হেরপর জেহাদের জজবায় পানি ঢাইল্যা সোজা বাড়ি। আমার টিজিং দিনগুলা শেষ হই গেলরে কাশেইম্যা! আরব কান্ট্রি ঘুইরা আইয়া আর মাইয়াগোরে উল্টা সিধা কতা কইতে পারিনা। রাইতের ভিসিআরেও আমারে ডাকেনা কেউ। আমি বুঝি খাসি হইয়া গেলামরে! এহন মাইয়ারাও আমারে টিজ করে। আমি নাদান কিছু কইতে পারিনা।

ধুর এই বয়সে এইসব কি কইতাছি। তারচেয়ে বেহেস্তের কথা ভাবি কিছুক্ষণ। দোজখের শাস্তির নিষ্ঠুরতা মাপি একটু। আর মনে মনে আল্লার কাছে পানাহ্ চাই। খোদা গো! তুমি আমার জীন্দেগীর সকল গুনাহ মাফ কইরা দাও। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছগিরা। হে আল্লাহ! তুমি আমারে বেহেস্ত নসীব কর।

1 টি মন্তব্য:

  1. কি গল্প হলো এটা? মনে হলো যেন শেষ হয়েও শেষ হলোনা। আরো কিছুটা দরকার ছিলো!

    উত্তরমুছুন