নীল, তুমি এমন কেন? তুমি কি একটুও আমাকে বোঝ না? তোমার ভালোবাসা পাওয়ার
জন্য, তোমার হাতে হাত
রেখে পথ চলার জন্য, তোমার লোমশ বুকে মুখ ঘষবার জন্য আমার মনটা আকুলি বিকুলি করে! তোমার সেই
প্রশ্নটা "বিয়ে করছো না কেন?" উত্তরটা কি জানো না তুমি নাকি হেঁয়ালি করো? বিয়ে তো করতেই চাই। চাই
একটি সাজানো গোছানো সংসার। কিন্তু, বিয়ের প্রস্তাবগুলো এলে মনে হয়, না না, আমার এখন বিয়ে করার অবসর
নেই। আমার আরেকটু সময় দরকার। আরেকটু!
তুমি তো জানো না সারাদিন কতটা মিস করি তোমায়। সকালে ঘুম
হতে জেগে কম্বলের ভেতরে হাতরে খুঁজে বের করি আমার মোবাইলটা আর ঘুমে অন্ধ চোখেই
তোমাকে জানাই 'সুপ্রভাত'! তুমি হয়তো তখন
রাত জেগে লেখালেখি করে বেশ দেরীতে ঘুমিয়েছো। আমি যখন তোমায় নক করেছি, তার কিছুটা পরে বিছানা ছাড়ার সময় হয়তো তোমার। এস এম এস
টা পাঠিয়েই ফোনটা সাইলেন্ট করে দেই আর কিছুটা শংকিত হই। এই হয়তো তোমার ফোন আসবে আর
ঝাড়ি খেতে হবে,
"কেন করো এইসব?" তোমার ঘুম জড়ানো বিরক্তির লেশ পড়া মুখ মনে
করি আর মনে মনে 'সরি' জানাই তোমাকে, "এবারটা ক্ষমা করো প্লিজ"। তোমার ছবিতে একটা চুমু এঁকে মোবাইলটাকে বালিশের নিচে ঢেকে রেখে চলে যাই ফ্রেশ হতে। দাঁত
ব্রাশ করতে আর মুখ ধুতে ধুতে ভাবতে থাকি, ফিরে তোমার মিসকল
বা এস এম এস পাবো। কিন্তু, ভাবাই সারা!! নাই কোন
ফোন, নাই কোন বার্তা।
সকাল আটটা পনেরো, এর মধ্যে স্কুলে পৌঁছে সাইন করতে হবে।
এখনও বাসার কেউ জাগেনি। আমাকে এখনই নাশতার ব্যবস্থা করতে হবে, নিজের খাওয়া শেষ করে টিফিন রেডি করে নিজের সাজুগুজু শেষ
করতে হবে। তাড়াতাড়ি কয়েকটা রুটি বানিয়ে সেঁকে নিলাম আর তোমার জন্য পরোটা-ডিম ভাজি।
আসলে সবই আমার জন্যই। কিন্তু, আমার ভাবনায় তুমি
সারাক্ষণই। তাই, আবার একটি এস এম এস করলাম, "নাশতা রেডি, তাড়াতাড়ি চলে এসো, সব জুড়িয়ে যাচ্ছে!"
তুমি হয়তো তখন উঠেছ,
অফিস যাওয়ার জন্য নিজেও নাশতা খেতে বসেছ, বা গোসল সেরে পোশাক পরছো। যাই হোক, তুমি আমার সাথে থাকলেই কি আর না থাকলেই কি, তোমার ছায়া তো আমার সাথেই থাকে!
রাতে ঘুমোতে যাবার সময় ভাবি, "এসো তো আর রাত জাগতে হবেনা। আমার পাশে এসো।
শুধু কম্বলে কি শীত মানে? তুমি বসে থাকবে আর আমি
একা একা ঘুমোবো! কম্বলের চেয়ে তোমার শরীরের উষ্ণতা বেশি কামনীয়। ...
: কিরে শিল্পী, টেবিলে বসে ঘুমাচ্ছিস
কেন?
মা কখন দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন টের পায়নি শিল্পী। ছবি আঁকা
বাদ দিয়ে কখন টেবিলে এসে বসেছে ও! মনে পড়লো না। নীলকে
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো, নাকি জেগে জেগে কথা
বলছিলো ও লোকটার সাথে! মা কি শুনে ফেলেছে কিছু!
: বিছানায় গিয়ে আরাম করে ঘুমা। আর বেশি রাত জাগিস না।
-মা বলে উঠলেন আবার।
: এইতো মা শুবো। তুমি যাও।
মা চলে গেলে আবার ভাবনা্য় ডুবে গেলো ও। মানুষটিকে নিজের
চোখে দেখেনি। শুধু ছবি দেখেছে। কি সুন্দর ফিগার! আর কি লম্বা! পাঁচ ফুট নয় ইন্ঞি।
একেবারে ওর মনের মত। পুরুষের এই হাইটটি ওর সবচেয়ে পছন্দ। পুরুষ মানুষ হিসেবে ও
একটু শুকনা হলেও বাকি সবকিছু মিলিয়ে এটা কোন খুঁতই নয়। সবাইকি পারফেক্ট হয়!
অসাধারণ দুটি বড় বড় চোখ ওর। একেবারেই আলাদা। অন্য কারো সাথেই মিলেনা। ঐ চোখ সে
বেশিরভাগ সময়েই সানগ্লাস দিয়ে ঢেকে রাখে। কারণটা জানেনা ও। কিন্তু, শিল্পীর নিজের ধারনা, ঐ চোখ ঢেকে রাখাই
ভালো। তাকানো যায়না ঐ চোখে। খুন হয়ে যেতে হয়। যেমন হয়েছে ও নিজে। মনে মনে বলে
ওঠে...
...ঐ চোখ ঢেকেই রাখো নীল
আমায় করেছ খুন
আর কারো করোনা সর্বনাশ।
"তোমার চোখেতে ধরা পরে গেছি আজ/ তোমার চোখেতে ধরা
পরে গেছি আজ" ...গুনগুনিয়ে গানটা গাইতে গাইতে প্লেটে রং মেশাতে মেশাতে ইজেলে
লাগানো ক্যানভাসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ছবিটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। সামনেই নীলের
জন্মদিন। এবস্ট্রাক্ট মুডের ছবি খুব পছন্দ ওর। ওর নিজেরও। কিন্তু, প্রথম দিকে রিয়েলিস্টিকই
বেশি আঁকতো। এবস্ট্রাক্ট ছবি আঁকা শুরু নীলের কথাতেই। বলা যা্য়, ও-ই ওর অনুপ্রেরণা।
বুয়েট থেকে এম.এস.সি করা টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার এই লোকটির
সাথে শিল্পীর পরিচয়ের সূত্রতা আবছা হয়ে এলেও প্রথম ফোনে কথা বলার মুহূর্তটা এখনো
কানে বাজে।
: সারাদিন বাসায় বসে কি করেন? চলে আসুন না আজ আমাদের আড্ডায়!
এত সুন্দর কন্ঠস্বর! পরিস্কার উচ্চারণ। মনে হয় সারাক্ষণ
কথা বলে। কথা শুনে। লোকটা বয়সে বছর দু-তিন সিনিয়র হবে ওর চেয়ে। প্রাণবন্ত যুবক!
গাম্ভীর্যের মুখোশ এঁটে থাকে। আর দেখলে মনে হয়, পাত্তা দিতে
চায়না। একটু আড়াল রাখার ব্যর্থ চেষ্টা?
লোকটা একটু মুডি। শিল্পী বোবা টাইপের নয়। একেবারে নতুন
কারো সাথেও দিব্বি জমিয়ে তুলতে পারে। নীলের সাথেও প্রথম বেশ কথা বলতো। কিন্তু, ওকে নিয়ে ভিন্ন করে ভাবতে শুরু করার পর থেকেই সরাসরি কথা
বলতে গিয়ে সহজ হতে পারেনা আর। লোকটা একটু কম কথা বলে। তবু, ফোন করলে কথাতো বলেই। ইচ্ছে হলেই ফোন করা যা্য়। কথাও বলা
যা্য়। কিন্তু, ফোনটা হাতে নিয়েই শিল্পীর কি যেন হয়ে যায়।
ভাবতেই থাকে! শুধু ভাবতেই থাকে! ইতস্তত ভাবটা কাটেই না। ফোন করে কি বলবে? কোন কারনতো নেই। অথচ, সে সারাক্ষণ নীলের
সাথে মনে মনে কত কথার জাল বুনে যায়।
নীলের লেখা কবিতাগুলো খুব ভালো লাগে ওর। তবে, বেশিরভাগ কবিতায় বিষন্ণতা। শিল্পীর ইচ্ছে হয় বলে, কবি তুমি আমার কাছে এসো, তোমার সব দু্ঃখ ঢেকে দেবো। আমার রং-তুলি দিয়ে তোমার সব দুখের রং ঢেকে দিয়ে
রংধনুর রঙে রাঙিয়ে দেবো আর বানাবো তোমার আমার ভালোবাসার বৃন্দাবন।
শিল্পী জানে বৃথাই বোনা তার এই সব স্বপনের জাল। শিল্পীর
খুব ভালো এক বন্ধু যে নীলকেও চেনে, বলেছিলো ওকে, "তুই অযথাই ওই ভাইয়ার পথ চেয়ে বসে আছিস রে! উনি বিয়ের
জন্যে সুন্দরী মেয়ে খুঁজছেন! তোর কোন চান্স নেই।"
শিল্পীরও তাই মনে হয়। নইলে ও কেন একটু ফিরে তাকায় না? এত যে সকাল-সন্ধা এসএমএস; এমনকি মাঝে মাঝে খুব গভীর রাতেও, সেইসব কি এমনি
এমনি! 'একটা বর খুঁজে দিন না' বলে বলে যে কান ঝালাপালা, এসবের অর্থ কি লোকটা একটুও বোঝে না? বর না ছাই! ওকেই যে
চায় সেটা বুঝি লোকটা একটুও বোঝে না! হঠাৎ খুব মন খারাপ হয়ে যায় ওর। পুরুষগুলো
চেহারার সৌন্দর্যের মধ্যে কি পায়! দেখতে ভালো হওয়াই কি সব! পড়াশুনাতেও ও খারাপ ছিলোনা
কখনই।
শিল্পীরা বিশাল ধনী না হলেও অবস্থা খারাপ নয়। মধ্যবিত্ত।
ঢাকা শহরে নিজেদের বাড়ি। ধানমন্ডি এলাকায়। যেটা ঢাকার
প্রাণকেন্দ্র। সবাই ওর বিয়ের চেষ্টা করছে। আঠাশ পেরিয়ে যাওয়া মেয়ের জন্য
বাবা-মায়ের ভাবনা হবে এটাইতো স্বাভাবিক। ভালো ভালো প্রস্তাবও আসে। ভালো পেশায়
নিয়োজিত সুন্দর সুন্দর পাত্র। অপছন্দনী্য় নয়। মানা করার মতও নয়। কিন্তু, ও রাজী হতে পারেনা। শুধু নীলের জন্য! এদিকে ওর বাকি
বোনগুলোও যে সিরিয়ালে রয়েছে।
বেশ রাত হয়ে গেছে। ফজরের সময় হয়ে আসবে ঘন্টা দুয়েক পরেই। তাড়াতাড়িঘুমনো দরকার। নীল, কি করছো এখন? দেশের বাড়ি গেলে কেন এই শীতের মধ্যে হঠাৎ! তাও কোন ছুটির
দিনে নয়! তবে কি বিয়ে করতে যাচ্ছ? খুব খুশি খুশি মেজাজ
দেখলাম। ঐ কাজ করোনা তুমি প্লিজ! প্লিজ তুমি আর কারো হাত ধরোনা। তোমার নির্ঘুম রাতের
সংগী কর শুধু আমাকেই। প্রতিটি রাত এক একটি আনন্দঘন সোনালি স্মরনীয় রাত
করে দেবো! কষ্ট করে গল্প বা কবিতাগুলো তোমায় টাইপ করতে হবে না। আমি তোমার পরিশ্রম
কমিয়ে দেবো শতভাগ। তোমার হয়ে ওটা আমিই করে দেবো। জোৎস্না রাতে আমায় তোমার বাঁশির
সুরে পাগল করবে। তোমাকে না পেলে আমার এই জীবনটাই যে বৃথা। তোমার ঐ ঠোঁটের আদর শুধু
আমার! শুধু আমার!
আমি নাহয় তোমায় মুখ ফুটে বলতে পারিনা। কিন্তু তুমি তো
একবার আমায় বলতে পারো। তোমার মুখে শোনার জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাকে? বুড়ি হয়ে গেলে!
কবি নির্মলেন্দু গুন এর গল্পের নায়িকার মত তখন বলবো তোমায়-আমার ঈশ্বর জানেন, আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য!আমার ঈশ্বর জানেন, আমার জ্বর এসেছে
তোমার জন্য! আমার ঈশ্বর জানেন, আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য! তারপর ঐ ঈশ্বরের মতো কোন
একদিন তুমিও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য! শুধুই তোমার জন্য।
নীল এখন কি করছো? হয়তো কোন সুন্দরীর স্বপ্ন আঁকছো! বালিখছো নতুন কোন লেখা। অথবা, তুমিও হয়তো শোয়ার আয়োজন করছো। নাকি "শুভ-রাত্রি"
লেখা শিল্পী নামের এক অচেনা মেয়ের এসএমএস পড়ছো! হয়তো জেগে আছে নির্ঘুম। হয়তো...
যাকে নিয়ে গল্পের মূল চরিত্র শিল্পী’র এত
বাঁধভাঙ্গা আবেগ, এবার তার ভাবনাগুলো জানা যাক-
নীল। নীল হায়াৎ! পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সরকারি
চাকুরির দাফতরিক পেশার ফাঁকে কলম চালান কি-বোর্ডে। পেশাগত ব্যস্ততার এক ফাঁকেই চোখ
বুলিয়ে নেয় নিজের শখের লেখার ভুবনে। অল্পকিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে একুশে বইমেলায়।
ছাপার অক্ষরের সৌখিনতার পাশাপাশি নীল আগ্রহী
ছবি তোলায়। মিরপুর দশে নিজের ডুপ্লেক্স বাড়ির একতলার সিড়ি হতে ছাদ পেরিয়ে খোলা নীল
আকাশ সহ পেশাগত অফিসবাড়ি ও সেই বাড়ি যাওয়ার পুরো পথের বিন্দু বিন্দু জীবের স্পন্দন
ফ্রেমে বন্দী করে নিতে যেন ততপর থাকে। অফিসে নেয়ার বড় ব্যাগে ল্যাপটপের পাশে এক কোণায়
বেশ আয়েশী কায়দায় ভরে নিয়ে বের
হয় প্রতিদিন ডিএসএলআর ক্যামেরাটি।
এমনি একদিন, অফিস ছুটির পরে ধানমন্ডিতে দরকার
ছিলো। রাস্তার দৃশ্য দেখতে দেখতে আসছিলো। ছবি তোলার সাবজেক্ট এত আশেপাশে! কিন্তু,
রাস্তাটা বৃষ্টিতে পানি জমা। ধানমন্ডি এলাকাতেও এরকম অবস্থা হয়! এদিক ওদিক তাকাতে
তাকাতে দেখলো, এক বাসার বারান্দা থেকে বেশ গলা বাড়িয়ে মে ফুল ওকে ডাকছে। ক্যামেরা তাক করে কয়েকটা শট নেয়া হয়ে গেলেই নিচে ঐ বাসার গেটের কাছে চোখে পরলো। এক একুশ বাইশ বছরের
তন্বী ললনা দাঁড়িয়ে। শরীরের বঙ্কিমে কোথাও যেন খুঁত নেই এতটুকু।
বিধাতা যেন নিজ হাতে গড়েছেন প্রতিটি ফোঁটা! মুহুর্তেই কয়েকটা শট নিয়ে নিলো সে
মেয়েটিরও। ভালো লাগলো মেয়েটিকে। অমাবস্যার অন্ধকারেও যে এত সৌন্দর্য্য থাকে এই
জানলো! কালো মেয়েটা!
নীল যে জন্য ধানমন্ডি এসেছিলো রিকশা চলতে
থাকলো সেদিকে। ক্যামেরায় আরো অনেক দৃশ্যপট বন্দী করে নিতে নিতে ও এগুতে লাগলো।
যেতে যেতে ধানমন্ডি সাতাশ নম্বর রোড ছাড়িয়ে
আড়ং এর দিকে মোড় নিলো রিকশাটা। একটু ঢুকেই থেমে গেলো একটি কমলা টাইলস বাঁধানো
বাসার সামনে। এখানে ইফতি থাকে। ওর জানের দোস্ত। ওদের বাসায় একটা দাওয়াত ছিলো।
দারোয়ান গেট খুলে দিলে সোজা লম্বা লম্বা পা ফেলে তৃতীয় তলার ডান দিকে এসে বেল
চাপলো। ভেতর থেকে খুব কলকল হাসির শব্দ ভেসে আসতে আসতে দরজায় এসে থামলো কণ্ঠটা।
দরজা খুলে দিলো মিষ্টি একটি পান পাতা মুখের গড়নের মেয়ে। ইফতির ছোট বোন। ভেতরে
ঢুকতেই আরো কিছু গেস্ট দেখতে পেল। তাদের মধ্যে চোখ আটকে গেলো একটি দৃশ্যপটে। একটু
আগে যাকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করে নিয়েছিলো সেই কাজল কালো মেয়েটা! কে সে?
তাকিয়েই ছিলো বলে ইফতি পাশ থেকে বলে উঠলো, “শিল্পী। অংকন শিল্পী!”
নীল প্রথমটায় বুঝতে পারেনি। কি বললো ইফতি। “অংকন
শিল্পী মেয়েটা? নাম কি ওনার?”
ইফতি এবার হেসে উঠলো শব্দ করে, “জানতাম তুমি
এই কথাই বলবে বন্ধু। ওর নাম শিল্পী। আর ও চিত্রশিল্পী! এইবার কি বুঝাতে পারলাম?”
এর মধ্যে শিল্পীও কাছে এগিয়ে এসেছে। “বেশ
সপ্রতিভ তো মেয়েটা! কালো কৃষ্টাল মূর্তি যেন!”
।।তিন।।
নিজের বাইক নিয়ে মাঝে মাঝে ছুটির দিনে শহরের
বাইরে গ্রামের দিকে চলে যাওয়া এক অন্যরকম নেশা নীলের। আর, গ্রামের পরিবেশ নিজের
চোখে দেখে অন্তরে অনুভব করে তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে ফুঁটিয়ে তোলার কৃতিত্বে চোখেমুখে
আত্মগর্বে গর্বিত শিল্পী। এইরকম দুই ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন মনের দুটি মানুষের
হৃদয়ের একদিন দু’দিন করে গুটি
গুটি পায়ে কাছাকাছি আসার।
এভাবেই একদিন_____
দু’জনে মিলে বের হয়েছে শহর সীমায়। অনেকটা শহর
থেকে বিচ্ছিন্ন। আকাশ মেঘ করবে বোধহয়। সামনে পেছনে শুধু চোখে পরছে পিচের রাস্তা।
হঠাত বাইক থামিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে পরলো নীল। শিল্পী বলে উঠলো, “কি ? যাবে না?” আশেপাশে তাকিয়ে বলে উঠলো, “ওয়াও!
কি সুন্দর!” বলে সেও নেমে এলো।
শিল্পী কিছু না বলে চোখ বুজে মিষ্টি মিষ্টি
হাসতে লাগলো। আর ওর কানে ভেসে এলো, নীলের ভরাট গলা...
“দেখেছো কি সুন্দর
এক প্রান্তরে এসে দাঁড়িয়েছি,
সামনে পেছনে যেদিকে তাকাই
শুধু নীল দিগন্ত,
পা ছড়িয়ে বসেছে!
বরণ করবে বলে
আমার তোমায়;
এমন একটি জায়গাই খুঁজছিলাম,
বহুদিন ধরে; খুঁজছিলাম!
বহুদিন ধরে জমিয়ে রাখা
একটি আত্মার চেয়েও প্রিয়,
কথা বলবো তোমায়!”
...থেমে গেলো কণ্ঠটা! কন্ঠে কি যেন ছিলো।
শিল্পী চোখ খুলে দেখতে পেলো, নীল তাকিয়ে আছে ওরই দিকে। হাতে একটা ছোট্ট বাক্স!
কিসের বাক্স? নীল ওটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরতেই, শিল্পী বলে উঠলো, “আংটি?” হ্যাঁ-সুচক
মাথা নেড়ে বাক্স খুলে নীল ওর হাতে পরিয়ে দিলো নীল মুক্তো বসানো অপরূপ আংটিটা! আর
এই মুহুর্তে এই প্রেমে বিগলিত দুই নর-নারীর ভালোবাসার সার্থক মিলন দৃশ্যটা বাঁধা
পরলো বিধাতার নিজস্ব ডিএসএলআর ক্যামেরা বা স্বপ্নীল ক্যানভাসে।
অনেক দিন ধরেই একটা ধারনা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এ সময়ের লেখকরা রোমান্টিক গল্প লেখাটা ভুলে গেছে। রোমান্স আনতে গেলেই অবধারিতভাবে সেখানে যৌনতা চলে আসে। ধারনা আমূল পাল্টে গেল লেখিকার কল্যাণে। সেখানে একটি কল্পচিত্র ঠাই পেল। দুই পাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, মাঝখান দিয়ে আমি বাইক চালিয়ে যাচ্ছি, পেছনে বসা আমার "ওগো"। একটা স্বপ্নও যেন তৈরী হল। আমার আংটিটা এভাবেই পড়াতে চাই আমি। লেখিকাকে ধন্যবাদ এমন একটি স্বপ্ন উপহার দেবার জন্য। সেই সাথে আমরও খায়েশ হল লেখিকাকে একটা গান উপহার দিই: "গাংচিলের ডানায় দিলাম এক আকাশ নীল মেঘে মেঘে ভালবাসার আজ হবে মিছিল প্রয়োজনে বৃষ্টি হবে ভিজিয়ে হৃদয় ভালবেসে শুদ্ধ হব মেনে পরাজয়।" তবে কেন যেন মনে হল যেন দু'টো গল্প পড়লাম। স্লট দু'টোর মধ্যে একসূত্রতাটা আরেকটু ভাল হলে মনে হয় আরো কিছুটা বেশি স্বপ্ন দেখতে পারতাম।
সামাজিক ধারণায় 'কালো মেয়ে" বা 'বেশি বয়সের অবিবাহিত মেয়ে" নিয়ে যে স্বাভাবিক ক্ষত আছে, এই গল্প সেই ট্রেণ্ড থেকে বের হয়ে এসেছে। যার কারণে গল্প অন্য একটা মাত্রা পেল আমার কাছে। "কালো কৃষ্টাল মূর্তি" এরকম সুন্দর সব উপমায় কালোও যে সুন্দরের প্রতীক এই সত্যটা ফিরে এসেছে। আবার অন্যদিকে পুরুষের উচ্চতা নিয়ে ধারণা পুরনো গণ্ডিতে থেকে গেছে। প্রথম পরিচ্ছেদে মেয়ের বয়স বলা হলো ২৮, (২)তে ২১/২২... তার মানে প্রথম পরিচয় ৫/৬ বছর আগে বুঝানো হলো? লেখনী খুব প্রাঞ্জল। লেখার গতিও দারুণ, কোথাও থেমে যেতে হয়নি। আবেগটা এত সুন্দর ছিল যে মুগ্ধ হয়েছি। খটখটে মনে কিছু রোমান্টিক বৃষ্টি এনে দিল। গল্পের পরিনতি আমার দারুণ লেগেছে। ভালোবাসা দিবসের গল্প কিংবা নাটক হিসেবে 'নীলে হারায়' চমৎকার হবে...
নীরোর উপহার দেয়া গানটা আমারও ভীষণ প্রিয় হয়ে গেছে। আমিও এক আকাশ নীল দিলাম লেখিকাকে...
সামাজিক ধারণায় 'কালো মেয়ে" বা 'বেশি বয়সের অবিবাহিত মেয়ে" নিয়ে যে স্বাভাবিক ক্ষত আছে, এই গল্প সেই ট্রেণ্ড থেকে বের হয়ে এসেছে। যার কারণে গল্প অন্য একটা মাত্রা পেল আমার কাছে। "কালো কৃষ্টাল মূর্তি" এরকম সুন্দর সব উপমায় কালোও যে সুন্দরের প্রতীক এই সত্যটা ফিরে এসেছে। আবার অন্যদিকে পুরুষের উচ্চতা নিয়ে ধারণা পুরনো গণ্ডিতে থেকে গেছে। প্রথম পরিচ্ছেদে মেয়ের বয়স বলা হলো ২৮, (২)তে ২১/২২... তার মানে প্রথম পরিচয় ৫/৬ বছর আগে বুঝানো হলো? লেখনী খুব প্রাঞ্জল। লেখার গতিও দারুণ, কোথাও থেমে যেতে হয়নি। আবেগটা এত সুন্দর ছিল যে মুগ্ধ হয়েছি। খটখটে মনে কিছু রোমান্টিক বৃষ্টি এনে দিল। গল্পের পরিনতি আমার দারুণ লেগেছে। ভালোবাসা দিবসের গল্প কিংবা নাটক হিসেবে 'নীলে হারায়' চমৎকার হবে...
নীরোর উপহার দেয়া গানটা আমারও ভীষণ প্রিয় হয়ে গেছে। আমিও এক আকাশ নীল দিলাম লেখিকাকে...
নীল, তুমি এমন কেন? তুমি কি একটুও আমাকে বোঝ না? তোমার ভালোবাসা পাওয়ার
জন্য, তোমার হাতে হাত
রেখে পথ চলার জন্য, তোমার লোমশ বুকে মুখ ঘষবার জন্য আমার মনটা আকুলি বিকুলি করে! তোমার সেই
প্রশ্নটা "বিয়ে করছো না কেন?" উত্তরটা কি জানো না তুমি নাকি হেঁয়ালি করো? বিয়ে তো করতেই চাই। চাই
একটি সাজানো গোছানো সংসার। কিন্তু, বিয়ের প্রস্তাবগুলো এলে মনে হয়, না না, আমার এখন বিয়ে করার অবসর
নেই। আমার আরেকটু সময় দরকার। আরেকটু!
তুমি তো জানো না সারাদিন কতটা মিস করি তোমায়। সকালে ঘুম
হতে জেগে কম্বলের ভেতরে হাতরে খুঁজে বের করি আমার মোবাইলটা আর ঘুমে অন্ধ চোখেই
তোমাকে জানাই 'সুপ্রভাত'! তুমি হয়তো তখন
রাত জেগে লেখালেখি করে বেশ দেরীতে ঘুমিয়েছো। আমি যখন তোমায় নক করেছি, তার কিছুটা পরে বিছানা ছাড়ার সময় হয়তো তোমার। এস এম এস
টা পাঠিয়েই ফোনটা সাইলেন্ট করে দেই আর কিছুটা শংকিত হই। এই হয়তো তোমার ফোন আসবে আর
ঝাড়ি খেতে হবে,
"কেন করো এইসব?" তোমার ঘুম জড়ানো বিরক্তির লেশ পড়া মুখ মনে
করি আর মনে মনে 'সরি' জানাই তোমাকে, "এবারটা ক্ষমা করো প্লিজ"। তোমার ছবিতে একটা চুমু এঁকে মোবাইলটাকে বালিশের নিচে ঢেকে রেখে চলে যাই ফ্রেশ হতে। দাঁত
ব্রাশ করতে আর মুখ ধুতে ধুতে ভাবতে থাকি, ফিরে তোমার মিসকল
বা এস এম এস পাবো। কিন্তু, ভাবাই সারা!! নাই কোন
ফোন, নাই কোন বার্তা।
সকাল আটটা পনেরো, এর মধ্যে স্কুলে পৌঁছে সাইন করতে হবে।
এখনও বাসার কেউ জাগেনি। আমাকে এখনই নাশতার ব্যবস্থা করতে হবে, নিজের খাওয়া শেষ করে টিফিন রেডি করে নিজের সাজুগুজু শেষ
করতে হবে। তাড়াতাড়ি কয়েকটা রুটি বানিয়ে সেঁকে নিলাম আর তোমার জন্য পরোটা-ডিম ভাজি।
আসলে সবই আমার জন্যই। কিন্তু, আমার ভাবনায় তুমি
সারাক্ষণই। তাই, আবার একটি এস এম এস করলাম, "নাশতা রেডি, তাড়াতাড়ি চলে এসো, সব জুড়িয়ে যাচ্ছে!"
তুমি হয়তো তখন উঠেছ,
অফিস যাওয়ার জন্য নিজেও নাশতা খেতে বসেছ, বা গোসল সেরে পোশাক পরছো। যাই হোক, তুমি আমার সাথে থাকলেই কি আর না থাকলেই কি, তোমার ছায়া তো আমার সাথেই থাকে!
রাতে ঘুমোতে যাবার সময় ভাবি, "এসো তো আর রাত জাগতে হবেনা। আমার পাশে এসো।
শুধু কম্বলে কি শীত মানে? তুমি বসে থাকবে আর আমি
একা একা ঘুমোবো! কম্বলের চেয়ে তোমার শরীরের উষ্ণতা বেশি কামনীয়। ...
: কিরে শিল্পী, টেবিলে বসে ঘুমাচ্ছিস
কেন?
মা কখন দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন টের পায়নি শিল্পী। ছবি আঁকা
বাদ দিয়ে কখন টেবিলে এসে বসেছে ও! মনে পড়লো না। নীলকে
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো, নাকি জেগে জেগে কথা
বলছিলো ও লোকটার সাথে! মা কি শুনে ফেলেছে কিছু!
: বিছানায় গিয়ে আরাম করে ঘুমা। আর বেশি রাত জাগিস না।
-মা বলে উঠলেন আবার।
: এইতো মা শুবো। তুমি যাও।
মা চলে গেলে আবার ভাবনা্য় ডুবে গেলো ও। মানুষটিকে নিজের
চোখে দেখেনি। শুধু ছবি দেখেছে। কি সুন্দর ফিগার! আর কি লম্বা! পাঁচ ফুট নয় ইন্ঞি।
একেবারে ওর মনের মত। পুরুষের এই হাইটটি ওর সবচেয়ে পছন্দ। পুরুষ মানুষ হিসেবে ও
একটু শুকনা হলেও বাকি সবকিছু মিলিয়ে এটা কোন খুঁতই নয়। সবাইকি পারফেক্ট হয়!
অসাধারণ দুটি বড় বড় চোখ ওর। একেবারেই আলাদা। অন্য কারো সাথেই মিলেনা। ঐ চোখ সে
বেশিরভাগ সময়েই সানগ্লাস দিয়ে ঢেকে রাখে। কারণটা জানেনা ও। কিন্তু, শিল্পীর নিজের ধারনা, ঐ চোখ ঢেকে রাখাই
ভালো। তাকানো যায়না ঐ চোখে। খুন হয়ে যেতে হয়। যেমন হয়েছে ও নিজে। মনে মনে বলে
ওঠে...
...ঐ চোখ ঢেকেই রাখো নীল
আমায় করেছ খুন
আর কারো করোনা সর্বনাশ।
"তোমার চোখেতে ধরা পরে গেছি আজ/ তোমার চোখেতে ধরা
পরে গেছি আজ" ...গুনগুনিয়ে গানটা গাইতে গাইতে প্লেটে রং মেশাতে মেশাতে ইজেলে
লাগানো ক্যানভাসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ছবিটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। সামনেই নীলের
জন্মদিন। এবস্ট্রাক্ট মুডের ছবি খুব পছন্দ ওর। ওর নিজেরও। কিন্তু, প্রথম দিকে রিয়েলিস্টিকই
বেশি আঁকতো। এবস্ট্রাক্ট ছবি আঁকা শুরু নীলের কথাতেই। বলা যা্য়, ও-ই ওর অনুপ্রেরণা।
বুয়েট থেকে এম.এস.সি করা টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার এই লোকটির
সাথে শিল্পীর পরিচয়ের সূত্রতা আবছা হয়ে এলেও প্রথম ফোনে কথা বলার মুহূর্তটা এখনো
কানে বাজে।
: সারাদিন বাসায় বসে কি করেন? চলে আসুন না আজ আমাদের আড্ডায়!
এত সুন্দর কন্ঠস্বর! পরিস্কার উচ্চারণ। মনে হয় সারাক্ষণ
কথা বলে। কথা শুনে। লোকটা বয়সে বছর দু-তিন সিনিয়র হবে ওর চেয়ে। প্রাণবন্ত যুবক!
গাম্ভীর্যের মুখোশ এঁটে থাকে। আর দেখলে মনে হয়, পাত্তা দিতে
চায়না। একটু আড়াল রাখার ব্যর্থ চেষ্টা?
লোকটা একটু মুডি। শিল্পী বোবা টাইপের নয়। একেবারে নতুন
কারো সাথেও দিব্বি জমিয়ে তুলতে পারে। নীলের সাথেও প্রথম বেশ কথা বলতো। কিন্তু, ওকে নিয়ে ভিন্ন করে ভাবতে শুরু করার পর থেকেই সরাসরি কথা
বলতে গিয়ে সহজ হতে পারেনা আর। লোকটা একটু কম কথা বলে। তবু, ফোন করলে কথাতো বলেই। ইচ্ছে হলেই ফোন করা যা্য়। কথাও বলা
যা্য়। কিন্তু, ফোনটা হাতে নিয়েই শিল্পীর কি যেন হয়ে যায়।
ভাবতেই থাকে! শুধু ভাবতেই থাকে! ইতস্তত ভাবটা কাটেই না। ফোন করে কি বলবে? কোন কারনতো নেই। অথচ, সে সারাক্ষণ নীলের
সাথে মনে মনে কত কথার জাল বুনে যায়।
নীলের লেখা কবিতাগুলো খুব ভালো লাগে ওর। তবে, বেশিরভাগ কবিতায় বিষন্ণতা। শিল্পীর ইচ্ছে হয় বলে, কবি তুমি আমার কাছে এসো, তোমার সব দু্ঃখ ঢেকে দেবো। আমার রং-তুলি দিয়ে তোমার সব দুখের রং ঢেকে দিয়ে
রংধনুর রঙে রাঙিয়ে দেবো আর বানাবো তোমার আমার ভালোবাসার বৃন্দাবন।
শিল্পী জানে বৃথাই বোনা তার এই সব স্বপনের জাল। শিল্পীর
খুব ভালো এক বন্ধু যে নীলকেও চেনে, বলেছিলো ওকে, "তুই অযথাই ওই ভাইয়ার পথ চেয়ে বসে আছিস রে! উনি বিয়ের
জন্যে সুন্দরী মেয়ে খুঁজছেন! তোর কোন চান্স নেই।"
শিল্পীরও তাই মনে হয়। নইলে ও কেন একটু ফিরে তাকায় না? এত যে সকাল-সন্ধা এসএমএস; এমনকি মাঝে মাঝে খুব গভীর রাতেও, সেইসব কি এমনি
এমনি! 'একটা বর খুঁজে দিন না' বলে বলে যে কান ঝালাপালা, এসবের অর্থ কি লোকটা একটুও বোঝে না? বর না ছাই! ওকেই যে
চায় সেটা বুঝি লোকটা একটুও বোঝে না! হঠাৎ খুব মন খারাপ হয়ে যায় ওর। পুরুষগুলো
চেহারার সৌন্দর্যের মধ্যে কি পায়! দেখতে ভালো হওয়াই কি সব! পড়াশুনাতেও ও খারাপ ছিলোনা
কখনই।
শিল্পীরা বিশাল ধনী না হলেও অবস্থা খারাপ নয়। মধ্যবিত্ত।
ঢাকা শহরে নিজেদের বাড়ি। ধানমন্ডি এলাকায়। যেটা ঢাকার
প্রাণকেন্দ্র। সবাই ওর বিয়ের চেষ্টা করছে। আঠাশ পেরিয়ে যাওয়া মেয়ের জন্য
বাবা-মায়ের ভাবনা হবে এটাইতো স্বাভাবিক। ভালো ভালো প্রস্তাবও আসে। ভালো পেশায়
নিয়োজিত সুন্দর সুন্দর পাত্র। অপছন্দনী্য় নয়। মানা করার মতও নয়। কিন্তু, ও রাজী হতে পারেনা। শুধু নীলের জন্য! এদিকে ওর বাকি
বোনগুলোও যে সিরিয়ালে রয়েছে।
বেশ রাত হয়ে গেছে। ফজরের সময় হয়ে আসবে ঘন্টা দুয়েক পরেই। তাড়াতাড়িঘুমনো দরকার। নীল, কি করছো এখন? দেশের বাড়ি গেলে কেন এই শীতের মধ্যে হঠাৎ! তাও কোন ছুটির
দিনে নয়! তবে কি বিয়ে করতে যাচ্ছ? খুব খুশি খুশি মেজাজ
দেখলাম। ঐ কাজ করোনা তুমি প্লিজ! প্লিজ তুমি আর কারো হাত ধরোনা। তোমার নির্ঘুম রাতের
সংগী কর শুধু আমাকেই। প্রতিটি রাত এক একটি আনন্দঘন সোনালি স্মরনীয় রাত
করে দেবো! কষ্ট করে গল্প বা কবিতাগুলো তোমায় টাইপ করতে হবে না। আমি তোমার পরিশ্রম
কমিয়ে দেবো শতভাগ। তোমার হয়ে ওটা আমিই করে দেবো। জোৎস্না রাতে আমায় তোমার বাঁশির
সুরে পাগল করবে। তোমাকে না পেলে আমার এই জীবনটাই যে বৃথা। তোমার ঐ ঠোঁটের আদর শুধু
আমার! শুধু আমার!
আমি নাহয় তোমায় মুখ ফুটে বলতে পারিনা। কিন্তু তুমি তো
একবার আমায় বলতে পারো। তোমার মুখে শোনার জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাকে? বুড়ি হয়ে গেলে!
কবি নির্মলেন্দু গুন এর গল্পের নায়িকার মত তখন বলবো তোমায়-আমার ঈশ্বর জানেন, আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য!আমার ঈশ্বর জানেন, আমার জ্বর এসেছে
তোমার জন্য! আমার ঈশ্বর জানেন, আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য! তারপর ঐ ঈশ্বরের মতো কোন
একদিন তুমিও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য! শুধুই তোমার জন্য।
নীল এখন কি করছো? হয়তো কোন সুন্দরীর স্বপ্ন আঁকছো! বালিখছো নতুন কোন লেখা। অথবা, তুমিও হয়তো শোয়ার আয়োজন করছো। নাকি "শুভ-রাত্রি"
লেখা শিল্পী নামের এক অচেনা মেয়ের এসএমএস পড়ছো! হয়তো জেগে আছে নির্ঘুম। হয়তো...
যাকে নিয়ে গল্পের মূল চরিত্র শিল্পী’র এত
বাঁধভাঙ্গা আবেগ, এবার তার ভাবনাগুলো জানা যাক-
নীল। নীল হায়াৎ! পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সরকারি
চাকুরির দাফতরিক পেশার ফাঁকে কলম চালান কি-বোর্ডে। পেশাগত ব্যস্ততার এক ফাঁকেই চোখ
বুলিয়ে নেয় নিজের শখের লেখার ভুবনে। অল্পকিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে একুশে বইমেলায়।
ছাপার অক্ষরের সৌখিনতার পাশাপাশি নীল আগ্রহী
ছবি তোলায়। মিরপুর দশে নিজের ডুপ্লেক্স বাড়ির একতলার সিড়ি হতে ছাদ পেরিয়ে খোলা নীল
আকাশ সহ পেশাগত অফিসবাড়ি ও সেই বাড়ি যাওয়ার পুরো পথের বিন্দু বিন্দু জীবের স্পন্দন
ফ্রেমে বন্দী করে নিতে যেন ততপর থাকে। অফিসে নেয়ার বড় ব্যাগে ল্যাপটপের পাশে এক কোণায়
বেশ আয়েশী কায়দায় ভরে নিয়ে বের
হয় প্রতিদিন ডিএসএলআর ক্যামেরাটি।
এমনি একদিন, অফিস ছুটির পরে ধানমন্ডিতে দরকার
ছিলো। রাস্তার দৃশ্য দেখতে দেখতে আসছিলো। ছবি তোলার সাবজেক্ট এত আশেপাশে! কিন্তু,
রাস্তাটা বৃষ্টিতে পানি জমা। ধানমন্ডি এলাকাতেও এরকম অবস্থা হয়! এদিক ওদিক তাকাতে
তাকাতে দেখলো, এক বাসার বারান্দা থেকে বেশ গলা বাড়িয়ে মে ফুল ওকে ডাকছে। ক্যামেরা তাক করে কয়েকটা শট নেয়া হয়ে গেলেই নিচে ঐ বাসার গেটের কাছে চোখে পরলো। এক একুশ বাইশ বছরের
তন্বী ললনা দাঁড়িয়ে। শরীরের বঙ্কিমে কোথাও যেন খুঁত নেই এতটুকু।
বিধাতা যেন নিজ হাতে গড়েছেন প্রতিটি ফোঁটা! মুহুর্তেই কয়েকটা শট নিয়ে নিলো সে
মেয়েটিরও। ভালো লাগলো মেয়েটিকে। অমাবস্যার অন্ধকারেও যে এত সৌন্দর্য্য থাকে এই
জানলো! কালো মেয়েটা!
নীল যে জন্য ধানমন্ডি এসেছিলো রিকশা চলতে
থাকলো সেদিকে। ক্যামেরায় আরো অনেক দৃশ্যপট বন্দী করে নিতে নিতে ও এগুতে লাগলো।
যেতে যেতে ধানমন্ডি সাতাশ নম্বর রোড ছাড়িয়ে
আড়ং এর দিকে মোড় নিলো রিকশাটা। একটু ঢুকেই থেমে গেলো একটি কমলা টাইলস বাঁধানো
বাসার সামনে। এখানে ইফতি থাকে। ওর জানের দোস্ত। ওদের বাসায় একটা দাওয়াত ছিলো।
দারোয়ান গেট খুলে দিলে সোজা লম্বা লম্বা পা ফেলে তৃতীয় তলার ডান দিকে এসে বেল
চাপলো। ভেতর থেকে খুব কলকল হাসির শব্দ ভেসে আসতে আসতে দরজায় এসে থামলো কণ্ঠটা।
দরজা খুলে দিলো মিষ্টি একটি পান পাতা মুখের গড়নের মেয়ে। ইফতির ছোট বোন। ভেতরে
ঢুকতেই আরো কিছু গেস্ট দেখতে পেল। তাদের মধ্যে চোখ আটকে গেলো একটি দৃশ্যপটে। একটু
আগে যাকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করে নিয়েছিলো সেই কাজল কালো মেয়েটা! কে সে?
তাকিয়েই ছিলো বলে ইফতি পাশ থেকে বলে উঠলো, “শিল্পী। অংকন শিল্পী!”
নীল প্রথমটায় বুঝতে পারেনি। কি বললো ইফতি। “অংকন
শিল্পী মেয়েটা? নাম কি ওনার?”
ইফতি এবার হেসে উঠলো শব্দ করে, “জানতাম তুমি
এই কথাই বলবে বন্ধু। ওর নাম শিল্পী। আর ও চিত্রশিল্পী! এইবার কি বুঝাতে পারলাম?”
এর মধ্যে শিল্পীও কাছে এগিয়ে এসেছে। “বেশ
সপ্রতিভ তো মেয়েটা! কালো কৃষ্টাল মূর্তি যেন!”
।।তিন।।
নিজের বাইক নিয়ে মাঝে মাঝে ছুটির দিনে শহরের
বাইরে গ্রামের দিকে চলে যাওয়া এক অন্যরকম নেশা নীলের। আর, গ্রামের পরিবেশ নিজের
চোখে দেখে অন্তরে অনুভব করে তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে ফুঁটিয়ে তোলার কৃতিত্বে চোখেমুখে
আত্মগর্বে গর্বিত শিল্পী। এইরকম দুই ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন মনের দুটি মানুষের
হৃদয়ের একদিন দু’দিন করে গুটি
গুটি পায়ে কাছাকাছি আসার।
এভাবেই একদিন_____
দু’জনে মিলে বের হয়েছে শহর সীমায়। অনেকটা শহর
থেকে বিচ্ছিন্ন। আকাশ মেঘ করবে বোধহয়। সামনে পেছনে শুধু চোখে পরছে পিচের রাস্তা।
হঠাত বাইক থামিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে পরলো নীল। শিল্পী বলে উঠলো, “কি ? যাবে না?” আশেপাশে তাকিয়ে বলে উঠলো, “ওয়াও!
কি সুন্দর!” বলে সেও নেমে এলো।
শিল্পী কিছু না বলে চোখ বুজে মিষ্টি মিষ্টি
হাসতে লাগলো। আর ওর কানে ভেসে এলো, নীলের ভরাট গলা...
“দেখেছো কি সুন্দর
এক প্রান্তরে এসে দাঁড়িয়েছি,
সামনে পেছনে যেদিকে তাকাই
শুধু নীল দিগন্ত,
পা ছড়িয়ে বসেছে!
বরণ করবে বলে
আমার তোমায়;
এমন একটি জায়গাই খুঁজছিলাম,
বহুদিন ধরে; খুঁজছিলাম!
বহুদিন ধরে জমিয়ে রাখা
একটি আত্মার চেয়েও প্রিয়,
কথা বলবো তোমায়!”
...থেমে গেলো কণ্ঠটা! কন্ঠে কি যেন ছিলো।
শিল্পী চোখ খুলে দেখতে পেলো, নীল তাকিয়ে আছে ওরই দিকে। হাতে একটা ছোট্ট বাক্স!
কিসের বাক্স? নীল ওটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরতেই, শিল্পী বলে উঠলো, “আংটি?” হ্যাঁ-সুচক
মাথা নেড়ে বাক্স খুলে নীল ওর হাতে পরিয়ে দিলো নীল মুক্তো বসানো অপরূপ আংটিটা! আর
এই মুহুর্তে এই প্রেমে বিগলিত দুই নর-নারীর ভালোবাসার সার্থক মিলন দৃশ্যটা বাঁধা
পরলো বিধাতার নিজস্ব ডিএসএলআর ক্যামেরা বা স্বপ্নীল ক্যানভাসে।
অনেক দিন ধরেই একটা ধারনা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এ সময়ের লেখকরা রোমান্টিক গল্প লেখাটা ভুলে গেছে। রোমান্স আনতে গেলেই অবধারিতভাবে সেখানে যৌনতা চলে আসে। ধারনা আমূল পাল্টে গেল লেখিকার কল্যাণে। সেখানে একটি কল্পচিত্র ঠাই পেল। দুই পাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, মাঝখান দিয়ে আমি বাইক চালিয়ে যাচ্ছি, পেছনে বসা আমার "ওগো"। একটা স্বপ্নও যেন তৈরী হল। আমার আংটিটা এভাবেই পড়াতে চাই আমি। লেখিকাকে ধন্যবাদ এমন একটি স্বপ্ন উপহার দেবার জন্য। সেই সাথে আমরও খায়েশ হল লেখিকাকে একটা গান উপহার দিই: "গাংচিলের ডানায় দিলাম এক আকাশ নীল মেঘে মেঘে ভালবাসার আজ হবে মিছিল প্রয়োজনে বৃষ্টি হবে ভিজিয়ে হৃদয় ভালবেসে শুদ্ধ হব মেনে পরাজয়।" তবে কেন যেন মনে হল যেন দু'টো গল্প পড়লাম। স্লট দু'টোর মধ্যে একসূত্রতাটা আরেকটু ভাল হলে মনে হয় আরো কিছুটা বেশি স্বপ্ন দেখতে পারতাম।
সামাজিক ধারণায় 'কালো মেয়ে" বা 'বেশি বয়সের অবিবাহিত মেয়ে" নিয়ে যে স্বাভাবিক ক্ষত আছে, এই গল্প সেই ট্রেণ্ড থেকে বের হয়ে এসেছে। যার কারণে গল্প অন্য একটা মাত্রা পেল আমার কাছে। "কালো কৃষ্টাল মূর্তি" এরকম সুন্দর সব উপমায় কালোও যে সুন্দরের প্রতীক এই সত্যটা ফিরে এসেছে। আবার অন্যদিকে পুরুষের উচ্চতা নিয়ে ধারণা পুরনো গণ্ডিতে থেকে গেছে। প্রথম পরিচ্ছেদে মেয়ের বয়স বলা হলো ২৮, (২)তে ২১/২২... তার মানে প্রথম পরিচয় ৫/৬ বছর আগে বুঝানো হলো? লেখনী খুব প্রাঞ্জল। লেখার গতিও দারুণ, কোথাও থেমে যেতে হয়নি। আবেগটা এত সুন্দর ছিল যে মুগ্ধ হয়েছি। খটখটে মনে কিছু রোমান্টিক বৃষ্টি এনে দিল। গল্পের পরিনতি আমার দারুণ লেগেছে। ভালোবাসা দিবসের গল্প কিংবা নাটক হিসেবে 'নীলে হারায়' চমৎকার হবে...
নীরোর উপহার দেয়া গানটা আমারও ভীষণ প্রিয় হয়ে গেছে। আমিও এক আকাশ নীল দিলাম লেখিকাকে...
সামাজিক ধারণায় 'কালো মেয়ে" বা 'বেশি বয়সের অবিবাহিত মেয়ে" নিয়ে যে স্বাভাবিক ক্ষত আছে, এই গল্প সেই ট্রেণ্ড থেকে বের হয়ে এসেছে। যার কারণে গল্প অন্য একটা মাত্রা পেল আমার কাছে। "কালো কৃষ্টাল মূর্তি" এরকম সুন্দর সব উপমায় কালোও যে সুন্দরের প্রতীক এই সত্যটা ফিরে এসেছে। আবার অন্যদিকে পুরুষের উচ্চতা নিয়ে ধারণা পুরনো গণ্ডিতে থেকে গেছে। প্রথম পরিচ্ছেদে মেয়ের বয়স বলা হলো ২৮, (২)তে ২১/২২... তার মানে প্রথম পরিচয় ৫/৬ বছর আগে বুঝানো হলো? লেখনী খুব প্রাঞ্জল। লেখার গতিও দারুণ, কোথাও থেমে যেতে হয়নি। আবেগটা এত সুন্দর ছিল যে মুগ্ধ হয়েছি। খটখটে মনে কিছু রোমান্টিক বৃষ্টি এনে দিল। গল্পের পরিনতি আমার দারুণ লেগেছে। ভালোবাসা দিবসের গল্প কিংবা নাটক হিসেবে 'নীলে হারায়' চমৎকার হবে...
নীরোর উপহার দেয়া গানটা আমারও ভীষণ প্রিয় হয়ে গেছে। আমিও এক আকাশ নীল দিলাম লেখিকাকে...
অনেক দিন ধরেই একটা ধারনা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এ সময়ের লেখকরা রোমান্টিক গল্প লেখাটা ভুলে গেছে। রোমান্স আনতে গেলেই অবধারিতভাবে সেখানে যৌনতা চলে আসে। ধারনা আমূল পাল্টে গেল লেখিকার কল্যাণে। সেখানে একটি কল্পচিত্র ঠাই পেল। দুই পাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, মাঝখান দিয়ে আমি বাইক চালিয়ে যাচ্ছি, পেছনে বসা আমার "ওগো"। একটা স্বপ্নও যেন তৈরী হল। আমার আংটিটা এভাবেই পড়াতে চাই আমি।
উত্তরমুছুনলেখিকাকে ধন্যবাদ এমন একটি স্বপ্ন উপহার দেবার জন্য। সেই সাথে আমরও খায়েশ হল লেখিকাকে একটা গান উপহার দিই:
"গাংচিলের ডানায় দিলাম
এক আকাশ নীল
মেঘে মেঘে ভালবাসার
আজ হবে মিছিল
প্রয়োজনে বৃষ্টি হবে
ভিজিয়ে হৃদয়
ভালবেসে শুদ্ধ হব
মেনে পরাজয়।"
তবে কেন যেন মনে হল যেন দু'টো গল্প পড়লাম। স্লট দু'টোর মধ্যে একসূত্রতাটা আরেকটু ভাল হলে মনে হয় আরো কিছুটা বেশি স্বপ্ন দেখতে পারতাম।
সামাজিক ধারণায় 'কালো মেয়ে" বা 'বেশি বয়সের অবিবাহিত মেয়ে" নিয়ে যে স্বাভাবিক ক্ষত আছে, এই গল্প সেই ট্রেণ্ড থেকে বের হয়ে এসেছে। যার কারণে গল্প অন্য একটা মাত্রা পেল আমার কাছে। "কালো কৃষ্টাল মূর্তি" এরকম সুন্দর সব উপমায় কালোও যে সুন্দরের প্রতীক এই সত্যটা ফিরে এসেছে। আবার অন্যদিকে পুরুষের উচ্চতা নিয়ে ধারণা পুরনো গণ্ডিতে থেকে গেছে। প্রথম পরিচ্ছেদে মেয়ের বয়স বলা হলো ২৮, (২)তে ২১/২২... তার মানে প্রথম পরিচয় ৫/৬ বছর আগে বুঝানো হলো? লেখনী খুব প্রাঞ্জল। লেখার গতিও দারুণ, কোথাও থেমে যেতে হয়নি। আবেগটা এত সুন্দর ছিল যে মুগ্ধ হয়েছি। খটখটে মনে কিছু রোমান্টিক বৃষ্টি এনে দিল। গল্পের পরিনতি আমার দারুণ লেগেছে। ভালোবাসা দিবসের গল্প কিংবা নাটক হিসেবে 'নীলে হারায়' চমৎকার হবে...
উত্তরমুছুননীরোর উপহার দেয়া গানটা আমারও ভীষণ প্রিয় হয়ে গেছে। আমিও এক আকাশ নীল দিলাম লেখিকাকে...
সামাজিক ধারণায় 'কালো মেয়ে" বা 'বেশি বয়সের অবিবাহিত মেয়ে" নিয়ে যে স্বাভাবিক ক্ষত আছে, এই গল্প সেই ট্রেণ্ড থেকে বের হয়ে এসেছে। যার কারণে গল্প অন্য একটা মাত্রা পেল আমার কাছে। "কালো কৃষ্টাল মূর্তি" এরকম সুন্দর সব উপমায় কালোও যে সুন্দরের প্রতীক এই সত্যটা ফিরে এসেছে। আবার অন্যদিকে পুরুষের উচ্চতা নিয়ে ধারণা পুরনো গণ্ডিতে থেকে গেছে। প্রথম পরিচ্ছেদে মেয়ের বয়স বলা হলো ২৮, (২)তে ২১/২২... তার মানে প্রথম পরিচয় ৫/৬ বছর আগে বুঝানো হলো? লেখনী খুব প্রাঞ্জল। লেখার গতিও দারুণ, কোথাও থেমে যেতে হয়নি। আবেগটা এত সুন্দর ছিল যে মুগ্ধ হয়েছি। খটখটে মনে কিছু রোমান্টিক বৃষ্টি এনে দিল। গল্পের পরিনতি আমার দারুণ লেগেছে। ভালোবাসা দিবসের গল্প কিংবা নাটক হিসেবে 'নীলে হারায়' চমৎকার হবে...
উত্তরমুছুননীরোর উপহার দেয়া গানটা আমারও ভীষণ প্রিয় হয়ে গেছে। আমিও এক আকাশ নীল দিলাম লেখিকাকে...